ঢাকা , বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪ , ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

কালেরগর্ভে হারিয়ে যেতে বসেছে খেজুর রসে 

নিউজ ডেস্ক
আপলোড সময় : ১৯-১১-২০২৪ ০৪:৫০:০৩ অপরাহ্ন
আপডেট সময় : ১৯-১১-২০২৪ ০৫:২৮:৫৩ অপরাহ্ন
কালেরগর্ভে হারিয়ে যেতে বসেছে খেজুর রসে  কালেরগর্ভে হারিয়ে যেতে বসেছে খেজুর রসে 



এম মনির চৌধুরী রানা চট্টগ্রাম 

চট্টগ্রামের ফৌজদারহাট এলাকার ডিসি পার্কের খেজুর গাছ থেকে রস সংগ্রহ করছেন গাছ থেকে আহমদ সলিম।গ্রামবাংলার শাশ্বত রূপের অংশ শীতকালীন ঐতিহ্য খেজুর রস বর্তমানে অনেকটা দুষ্প্রাপ্য। কদর থাকলেও সারা দেশের মতো চট্টগ্রামেও এই রসের সন্ধানে গলদঘর্ম হয় ক্রেতারা। তবে জেলার সীতাকুণ্ড উপজেলায় এখনও রসের চিরচেনা স্বাদে মাতোয়ারা হয় চারপাশ। উপকূলীয় এই উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় দেখা মেলে সারি সারি খেজুরগাছ।গত বছর  উদ্বোধন হওয়া ডিসি পার্কের অন্দরমহলেও রয়েছে সারিবদ্ধ খেজুরগাছ। সেই সঙ্গে দেখা মিলছে রস সংগ্রহকারী গাছির। প্রতিদিন দুই দফা খেজুর রস বিক্রি করে কনকনে শীতে পকেট গরম করছেন গাছি আহমদ সলিম। রাত ৮ টা এবং ভোর ৫ টা দুই দফা রস বিক্রি করছেন মোশাররফ। ডিসি পার্কের ভেতরেই আছে শতাধিক গাছ। এসব গাছ থেকে রস সংগ্রহ করে বিক্রির জন্য আহমদ সলিমকে  অপেক্ষা করতে হয় না। বাজারে নেওয়ার প্রয়োজনও পড়ে না। উল্টো মোবাইল ফোনে রসের জন্য অর্ডার  দিয়ে সরবরাহ পেতে ভোক্তারা হিমশিম খাচ্ছেন। ক্রেতারা ফৌজদারহাটের ডিসি পার্ক এলাকা থেকেই রস সংগ্রহ করে নিয়ে যান। আহমদ সলিম রস সরবরাহ দিলেই ভোক্তাদের অপেক্ষার প্রহর শেষ হয়। কথা হয় আহমদ সলিমের সঙ্গে। খেজুরগাছের রস সংগ্রহের আয়োজন করতে তিনি বাটালি হাতুড়ি নিয়ে তখন গাছের ওপর। রশি দিয়ে কোমর বেঁধেছেন যেন পা পিছলে পড়ে না যান। দুই দিন আগে রস নামিয়েছিলেন। এখন নতুন করে গাছের অংশবিশেষ (ছাল) বাটালি দিয়ে কেটে দিচ্ছেন। তারপর গাছের সঙ্গে ঝুলিয়ে দিচ্ছেন প্লাস্টিকের জার। রস সংগ্রহের শুরুতেই দেখা গেল, টুপ টুপ করে ফোঁটা ফোঁটা রস পড়ছে জারে। আগে মাটির কলসি ঝুলিয়ে দেওয়া হতো। এখন মাটির হাঁড়ি বা কলসির স্থান দখল করেছে প্লাস্টিকের জার।  জানতে চাইলে রসের দাম কত? রাত ১০টায় নিলে প্রতি লিটার ১০০ টাকা। ভোরে নিলে ৮০ টাকা। দামের হেরফের কেন?

প্রশ্ন শুনেই বললেন, রাতের রস বেশি পরিষ্কার হয়। তাই দাম বেশি। সে বেশি ব্যস্ত্য তার দম পেলাবার যেন সময নেই, দ্রুততার সঙ্গে সব গাছে জার বসাতে হবে। রাতেই রস ডেলিভারির সময় নির্ধারিত আছে। ৫ লিটার রস দিতে পারবেন? প্রশ্ন শুনতে শুনতে তিনি অন্য গাছের দিকে হাঁটা শুরু করলেন। তার হাতে সময় নষ্ট করার মত সময় নেই। তার সাথে হেটে হেটে জানতে চাইলে।

আহমদ সলিম বললেন, আগামী ৩ দিন  কোন অর্ডার নিতে পারবো না । তিন দিন পর  ফোন করে আসুন। দিতে পারব। ফোন করার কথা শুনে নম্বর চাইতেই দ্রুততার সঙ্গে নম্বর বলে গেলেন। শেষে যোগ করলেন, আগে ফোন করে সিরিয়াল নেবেন। না হলে দিতে পারব না।  

ডিসি পার্ক এলাকায় যখন শীতের খেজুর রস সংগ্রহ ও বিক্রিতে মোশাররফের এমন ব্যস্ততা, তখন চট্টগ্রাম মহানগরীসহ অন্য উপজেলাগুলোতে রসের দেখা কার্যত নেই। চট্টগ্রামের ১৬টি উপজেলায় একসময় দেশের অন্য জেলার মতো বিপুলসংখ্যক খেুজরগাছ ছিল। কিন্তু কালের বিবর্তন এবং গাছখেকোদের কবলে পড়ে এখন প্রায় খেজুরগাছশূন্য হয়ে পড়েছে চট্টগ্রাম। তবে উপকূলীয় উপজেলা সীতাকুণ্ডে এখনও কয়েক হাজার খেজুরগাছ টিকে আছে। এখন হাড় কাঁপানো শীতে সীতাকুণ্ডের রস ব্যবসায়ীরা সীতাকুণ্ড ছাড়াও চট্টগ্রাম মহানগরীতে এনে খেজুর রস বিক্রি করছেন। অবশ্য, সীতাকুণ্ডের মতো না হলেও মিরসরাই এলাকায় কিছু খেজুরগাছ আছে। কিন্তু অন্য উপজেলাগুলোতে খেজুরগাছ হাতো গোনা সংখ্যায় নেমেছে। এ কারণে সেসব উপজেলায় খেজুর রস সংগ্রহ কার্যত বন্ধ হয়ে পড়েছে।

পুষ্টি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের ভাষ্য অনুযায়ী, খেজুর রস প্রচুর খনিজ ও পুষ্টিগুণসমৃদ্ধ। এতে ১৮/২০ শতাংশ দ্রবীভূত শর্করা থাকে। এই রস দিয়ে গুড় উৎপাদিত হয়। এই গুড় সুমিষ্ট, পুষ্টিকর এবং সুস্বাদু। খেজুর গুড়ে প্রোটিন, ফ্যাট ও মিনারেল থাকে। খেজুর রসের স্বাস্থ্যগুণ থাকলেও সেই রস চট্টগ্রামের সব ভোক্তা পান না সরবরাহের অভাবে। গ্রামাঞ্চলে এখন আর আগের মতো খেজুরগাছ নেই। সীতাকুণ্ড ও মিরসরাই উপজেলার উপকূলীয় এলাকায় কিছু গাছ থাকলেও সেই গাছ থেকে সংগৃহীত রস দিয়ে চট্টগ্রামের ভোক্তাদের চাহিদা মেটে না। আবার বিলুপ্ত গাছ হিসেবে খেজুর রসের স্বাদই পায়নি অনেক উপজেলার শিশুরা। তাদের কাছে খেজুরগাছ এবং রসের স্বাদ এমন শুধুই গল্প। খেজুরগাছ প্রায় বিলুপ্ত হয়েছে এমন উপজেলার একটি বোয়ালখালী।

উপজেলার বাসিন্দার মোহাম্মদ আলী বলেন, ছোটবেলায় আমাদের খেজুরগাছ ছিল ১০টি। এখন একটিও নেই। পুরো পাড়ায় কারও নেই। তাই সর্বশেষ খেজুর রস দিয়ে ভাপা পিঠা কবে খেয়েছি মনে করতে পারছি না।  খেজুরগাছ কমে যাওয়ার বিষয়ে বন বিভাগের সহকারী বন সংরক্ষক মো. জয়নাল আবেদীন বললেন, ‘খেজুরগাছ বনের গাছ নয়। গ্রামীণ জনপদের বাসিন্দারা রাস্তার ধারে কিংবা নিজস্ব উঁচু জমিতে পরিচর্যার মাধ্যমে খেজুরগাছ লালন করেন। এখন সময়ের বিবর্তনে খেজুরগাছ কমে গেছে এটা সঠিক। কিন্তু খেজুরগাছ রক্ষণাবেক্ষণ এবং বিলুপ্তির হাত থেকে রক্ষার জন্য বন বিভাগের সামাজিক বনায়ন কর্মসূচির অংশ হিসেবে নতুন করে খেজুরগাছ লাগানো যেতে পারে। তাহলে বিলুপ্তির হাত থেকে খেজুরগাছ রক্ষা করা সম্ভব হবে। পাশাপাশি আর্থিকভাবে লাভবান হওয়া যাবে।


 

নিউজটি আপডেট করেছেন : Banglar Alo News Admin

কমেন্ট বক্স

এ জাতীয় আরো খবর

সর্বশেষ সংবাদ